Header Ads



গণিতের ম্যাজিক: শূন্যের উৎপত্তি

শূন্য সাংস্কৃতিক শব্দ। যে গাণিতিক হিসাবের সময় যদি দশকের ঘরে কোন সংখ্যা না থাকে তাহলে সামঞ্জস্য রাখার জন্য একটি ছোট্ট বৃত্ত দিয়ে তা পূরণ করা যেতে পারে। সেই ছোট বৃত্তকে তিনি সিফার (صفر) নামে অবিহিত করেন। তার উল্লিখিত এই সিফারই বর্তমান যুগের জিরো বা শূন্য।



আরবি ভাষায় এর অর্থ হলো ফাঁকা বা খালি জায়গা। শূন্যের উৎপত্তি হয়েছিল ভারতবর্ষে। গ্রিক দার্শনিক টলেমি কিছু না বোঝাতে একটি ক্ষুদ্র বৃত্ত ০ ব্যবহার করেন। এটা  গ্রিক ouser এর প্রথম শব্দ। ouser এর অর্থ কিছুই না। প্রাচীনকালে শূন্য বলতে কেন্দ্র চিহ্নিত বৃত্তকে বোঝাত।
পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ আবিষ্কারগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো শূন্য। দিলীপ এম সালভির মতে শূন্য গণিতে অসম্পূর্ণতাকে পূর্ণতা দান করেছে, এর কার্যকারিতা, সূক্ষতা, সৌন্দর্য ও গৌরব বৃদ্ধি করেছে।
শূন্য বলতে যে চিহ্নটি ব্যবহার করা করা হয় তা হলো ০। ঐতিহাসিকদের মতে গ্রিকরা কিছু না বোঝাতে ‘omicron’ শব্দটি ব্যবহার করত যা ‘ouden’ নামে পরিচিত। আর এখন থেকে ‘০’ চিহ্নটি ব্যবহৃত হয়। অন্য একমতে মানবিহীন একটি মুদ্রা যার নাম ছিল obal.GBobal থেকেও ০ চিহ্নটি আসতে পারে। তবে নাম বোঝাতে শূন্য ইংরেজি প্রতিশব্দ Zero থেকে এসেছে যা Avide sifr থেকে এসেছে। দশম শতাব্দীতে আরবীয়রা যখন ভারতীয় সংখ্যা লিপি গ্রহণ করে তখন শূন্য শব্দটি অনুবাদ করছিল ‘সিফর’ বলে। আরবি সিফর শব্দটি ইতালীয় ভাষায় ‘জেপিরো’ এই জেফিরো থেকে এসেছে ‘জিরো’।
খ্রিস্টীয় যুগ সৃষ্টির আগে ভারতীয়া শূন্য সম্পর্কে জানত বলে ধারণা করা হয় আর এ কথা প্রাচীন ভবিষ্যৎদ্রষ্টা পিঙ্গলা এবং কৌটিল্য অনেকবার তাদের সাহিত্যকর্মে ব্যবহার করেছেন।
সুবিখ্যাত আরাবীয় গণিতবিদ আল খারেজমি ৮২৫ সালে লেখা একখানা গ্রন্থে বলেছেন ভারতীয়রা গণিত শাস্ত্রের উদ্ভাবন করেছেন। মধ্য আমেরিকার মায়ারাও শূন্যের উদ্ভাবন করেন। ব্যবিলনীয় সভ্যতাও শূন্য সম্পর্কে জানত। গ্রিক, ব্যবিলন, মধ্য আমেরিকা ও ভারতীয়রা শূন্য আবিষ্কার করলেও ভারতীয়রা এর তাৎপর্য বুঝতে পেরে শূন্য কে সংখ্যা হিসেবে গ্রহণ করে।
খ্রিস্টপূর্ব ৭০০ অব্দে পশ্চিম ব্যবিলনের মেসোপটেমীয় শহরে পাওয়া একটি ফলকে শূন্য বোঝাতে দুই ক্লিক (“) চিহ্ন ব্যবহারের নিদর্শন পাওয়া যায়। যেমন ৯০৩ বা ৯”৩। ১৩০ সালে টলেমি খালি স্থান বোঝাতে ০ চিহ্নটি ব্যবহার করেন তবে সংখ্যা হিসেবে ব্যবহার করেন ৫৬০ সালে। ভারতে যা ২০০ সাল থেকেই প্রচলিত ছিল।
৫০০ সালে আর্যভট্টের প্রচলিত সংখ্যা পদ্ধতিতে স্থানিক মান  বোঝাতে “খ” শব্দটি ব্যবহার করেন। পরবর্তীতে যার নাম হয় শূন্য। আর্কিমিডিস ‘স্যান্ড রেকনার” গ্রন্থে যে সংখ্যা পদ্ধতি বর্র্ণনা করেন তাতে শূন্য রাশিটি ছিল না। মায়া সভ্যতায় স্থানিক অঙ্কপাতনে শূন্য ব্যবহার দেখা যায়।
আর্যভট্ট তার ‘মহাসিদ্ধান্ত’ গ্রন্থে বলেছেন শূন্যকে কোন সংখ্যার সঙ্গে যোগ করলে বা বিয়োগ করলে সংখ্যাটি অপরিবর্তিত থাকে। শূন্য দিয়ে কোন সংখ্যাকে গুণ করলে গুণফল শূন্য হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। ব্রহ্মগুপ্তের গবেষণা পরবর্তীতে ভাস্করাচার্যকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। ভাস্করাচার্য ব্রহ্মগুপ্তকে ‘গনক চুড়ামনি’ উপাধি দেন। শূন্য আবিষ্কারে এই ভাস্করাচার্যের অনেক অবদান আছে। খ্রিস্টপূর্ব: ২০০ সালে পিঙ্গল শূন্যের ব্যবহার করেন কিন্তু তিনি যে এর আবিষ্কারক এ দাবি তিনি করেননি। ভাস্করাচার্য তার ‘লীলাবতী’ গ্রন্থে বলেন ‘শূন্য দ্বারা কোন সংখ্যাকে বিভাজিত করলে ভাগফল অসীম হবে। বাগদাদের খলিফা আল মনসুরের শাসনামলে এক দল পণ্ডিতকে ছদ্মবেশে ভারত বর্ষে পাঠান। উদ্দেশ্য ভারতীয় চিকিৎসা, গণিত ও জ্যোতির্শাস্ত্র বিষয়ে জ্ঞান লাভ করা। এভাবে শূন্য আরবে আর সেখান থেকে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। ভারতীয় শূন্য আরবীয়রা আরো জনপ্রিয় করে তোলেন যার মধ্যে আল খোয়ারিজমি অন্যতম। আল খোয়ারিজমি ভারত সফর করেন ও বাগদাদে গিয়ে লেখেন তার বিখ্যাত গ্রন্থ ‘হিসাব-আল-জাবর-ওয়া-আল-মোকাবেলা’। সেখানে শূন্যকে বলা হয়েছে সিফর। বাংলায় শূন্যকে খ, গগন, আকাশ, নভো ইত্যাদি নামে। ইউরোপীয়দের মতে সংখ্যা হলো গুপ্ত লিখনের চাবিকাঠি বা সাঙ্কেতিক ভাষা আর গুপ্ত চাবিকাঠি হলো ইংরেজিতে ‘cipher’। ভারতীয় শূন্য যখন ইউরোপে প্রবেশ করে তখন এর অন্তর্গত শক্তি সম্বন্ধে উপলব্ধি করে আর শূন্য হয়ে দাঁড়ায় অসীম সম্ভাবনার দ্বার। আজকে বাইনারি গণিতের মূলে রয়েছে ০ ও ১। 
ভারতীয় উপমহাদেশের গণিতবিদ আর্যভট্টের একটি বই-এ পাওয়া যায়, স্থানম স্থানম দশ গুণম।এখানে হয়তবা তিনি বুঝাতে চেয়েছিলেন, স্থানে স্থানে দশ গুণের কথা। তবে এখানেও শুন্যের কথা লুকায়িত ছিল। শেষ পর্যন্ত শুন্যকে সংখ্যার পরিচয় দেন ব্রহ্মগুপ্ত। তার ব্রহ্মস্ফুটসিদ্ধান্ত নামক বই-এ প্রথম শুন্যকে সংখ্যা হিসেবে মর্যাদা দেয়া হয়। শূন্যের সাথে যোগ , বিয়োগ , গুণের কথা এই বই-এ সঠিকভাবে দেয়া হয়। এছাড়া মহাবীর এবং ভাস্কর শুন্য নিয়ে কাজ করেন। তবে দুঃখের বিষয় এদের কেউ শুন্য দিয়ে কোন কিছু ভাগের কথা উল্লেখ করেনি।

তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট

কোন মন্তব্য নেই

Please validate the captcha.

mrinalmsc. enot-poloskun থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.