নিয়মিত ম্যানেজিং কমিটি বা গভার্ণিং বডি গঠনের প্রতিবন্ধকতা!
বর্তমান বিশ্ব নোভেল করোনাভাইরাস এর কারণে সকল কিছু স্থবির হয়ে গেছে। তার বাহিরে আমাদের দেশও বাদ যায়নি। ধাপে ধাপে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয় এবং এখনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রয়েছে। এ সময়ে শিক্ষা ক্ষেত্র বিশাল ক্ষতির মুখে পড়েছে যদিও সরকারি বিভিন্ন উদ্যোগ এর কারণে ক্ষতি পূরণ করার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
কিন্তু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়মিত ম্যানেজিং কমিটি বা গভার্ণিং বডি না থাকার কারণে নানান জটিলতায় পড়ছে। অনেক ক্ষেত্রে নিয়মিত কমিটি না থাকায় শিক্ষক/কর্মচারী নিয়োগ থেকে শুরু করে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিন্ধান্ত গ্রহণ করা যাচ্ছে না। তাছাড়া করোনাকালীন সময়ে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম চলাম, শিক্ষকদেরকে দিক নির্দেশনা সহ নানান বিষয়ে পরামর্শ ও সিদ্ধান্ত প্রদান করার ক্ষেত্রে ম্যানেজিং কমিটি বা গভার্ণিং বডির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। সেক্ষেত্রে এডহক কমিটি ছয় মাসের দায়িত্ব পেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ও কাজের গতি সঠিকভাবে পালনে কিছুটা বিঘ্নিত হচ্ছে।
প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রতি ছয় মাস পর পর প্রচুর পরিশ্রম, অফিসে অফিসে যাওয়া আসা ও অনেক টাকা খরচ করে এডহক কমিটি গঠনের ব্যবস্থা করতে হয়। অনেক প্রতিষ্ঠান একটি এডহক কমিটি গঠন করে আবারও আরেকটি এডহক কমিটি গঠনের ব্যবস্থা করতে হচ্ছে বা আরো করতে হবে। যার ফলে প্রতিষ্ঠানগুলো আর্থিকভাবে ক্ষতি হচ্ছে। তাছাড়া এডহক কমিটির সভাপতি মনোনয়ন নিয়ে এলাকায় পক্ষে বিপক্ষে প্রতিষ্ঠান প্রধানের উপর প্রচুর চাপ ও জনগণের অনেক ক্ষেভের সৃষ্টি হচ্ছে। যদিও প্রবিধান অনুযায়ী সভাপতি মনোনয়ন বোর্ড দিবে কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে সভাপতি মনোনয়ন এর তিন জনের নামের প্রস্তাবটি প্রতিষ্ঠান প্রধানের কাছ থেকে গ্রহণ করছেন।
বর্তমানে নিয়মিত ম্যানেজিং কমিটি বা গভার্ণিং বডি গঠনে আইনি জটিলতা হলো এই যে, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড এর বেসরকারি মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের ম্যানেজিং কমিটি বা গভর্ণিং বডি প্রবিধানমালা ২০০৯ এর আলোকে ধারা ১২ এর উপধারা ৩ ও ৬ এ উল্লেখ আছে খসড়া ও চুড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রণয়নের পর প্রতিষ্ঠান প্রধান শ্রেণি কক্ষে পাঠ করে গুনাইবার ব্যবস্থা করবেন। প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় বর্তমানে প্রবিধান অনুযায়ী উক্ত ধারায় কার্যক্রম পরিচালনা সম্ভব নয়।
কিন্তু বর্তমানে জাতীয়ভাবে বিভিন্ন পর্যায়ে নির্বাচন হচ্ছে এতে কোনো প্রকার সমস্যা বা আইনি জটিলতা তৈরি হচ্ছে না। তাহলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এই নির্বাচন প্রক্রিয়াটি কেন পিছিয়ে থাকবে? এই জন্য প্রয়োজন শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা। করোনাকালীন সময় যেহেতু শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকগণ অনলাইনের সাথে জড়িত তাই এই খসড়া ও চুড়ান্ত ভোটার তালিকা অনলাইনে প্রকাশ করলেই তাহা শ্রেণি কক্ষে পাঠিত হয়েছে মর্মে নির্দেশনা প্রদান করা যেতে পারে কিনা? যদি সম্ভব হয় তাতে দেশের বিশাল সংখ্যক বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিয়মিত কমিটি গঠনের দ্বার খুলে যাবে এবং জটিলতা নিরসন হবে।
নতুবা এডহক কমিটির মেয়াদ বৃদ্ধি করা সম্ভব কিনা তা ভেবে দেখা দরকার।
শিক্ষা বোর্ডগুলো দুই বছরের জন্য নিয়মিত কমিটির জন্য ফি ৪,০০০.০০ টাকা পাচ্ছে তাই ছয় মাসের এডহক কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে সমপরিমাণ অর্থ না নিয়ে ফি এর হার কমানো যায় কিনা? কারণ করোনাকালীন সময়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থীদেরকে বেতন ফি অনেকটাই মওকুফ করে দিচ্ছে। যারফলে প্রতিষ্ঠানগুলো আর্থিক অস্বচ্ছতার মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠানের ব্যয়ভার মেটানোর চেষ্টা করছে। অনেকে প্রতিষ্ঠান শিক্ষকদেরকে তাদের পাওনাও পরিশোধ করতে পারছে না এবং হয়তোবা বকেয়া অংশ আর পরিশোধ করতে পারবেও না।
তাই শিক্ষা মন্ত্রণালয় এই জটিলতা নিরসনে নিয়মিত কমিটি গঠনের সমসাময়িক ডিজিটাল ব্যবস্থায় নির্দেশনা জারি করা এখন সময়ের চাহিদা। পাশাপাশি নিয়মিত কমিটি ও এডহক কমিটি গঠন ফি এর মধ্য সমন্বয় করা দরকার।
মৃণাল কান্তি সাহা
শিক্ষক, লেখক
কোন মন্তব্য নেই
Please validate the captcha.